জীবন কর্মের। কর্মের মধ্যে থাকলে জীবনের ভুলভ্রান্তি কমে যায় এবং আত্মবিশ্বাস জন্মায়, বর্ণিল হয়ে উঠে জীবন। তখন বুঁদ হয়ে আরো আরো কাজের মধ্যে ডুবে যায় মানুষ। ফলত, ব্যস্ততা বাড়ে, বাড়তেই থাকে। তখনই চলা শুরু করে জীবনের উল্টো রথও। সেই উল্টো রথে চড়ে আমরা ভুলে যাই সব। দৃষ্টির অগোচরে চলে যায় পারিপার্শ্বিকতা, অতীতের দিকে তাকানোর ফুসরত মেলে না, শুধুই সামনের দিকে তাকিয়ে ব্যস্ততায়—ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। এই যে জীবনকে এগিয়ে নিতে কাজে নিমগ্ন হওয়া, আবার কাজে নিমগ্ন থেকে জীবনকেই অবহেলা করা। এরকম যুগপৎভাবে সামনে ও পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই চলে আসে অবসর জীবন।
অবশেষে, অবসর জীবনের অলস সময়গুলো হয়ে উঠে স্মৃতির জাবর কাটার দিন।
মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন দীর্ঘকাল এমন নৈমিত্তিক জীবন কাটিয়ে আজকাল- এই অবসর জীবনেÑ বড্ড বেশি স্মৃতিতাড়িত হয়ে পড়েছেন। বিশেষত, বন্ধু আতিয়ারের স্মৃতি বেশ তাড়িয়ে ফিরছে। কিছু দিন হয় খুব করে মনে পড়ছে তাঁকে। কতকাল আগে কোনো এক অজানা জায়গায় সমাহিত করেছিলেন তাঁকে। তারপর অনেক সময় কেটে গেলেও যাওয়া হয়নি ওদিকে।
সামনেই বিজয় দিবস, মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন স্থির করেছেনÑ এবার বিজয় দিবসে আতিয়ারের সমাধিতে যাবেন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে।
বিজয় দিবস সন্নিকটে আসতে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেনের বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়া শরীরে তেজী ভাব সঞ্চারিত হতে থাকে। অতঃপর বিজয় দিবসের খুব ভোরে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে যাত্রা শুরু করেন একা—একা; সহযোদ্ধা বন্ধুদের কাছের কেউ বেঁচে নেই আজ; তাই আবেগ ভাগ করার মানুষও নেই সাথে। নিজের আবেগগুলো নিজের ভেতর পুষে রেখে পথ চলেন। আবেগ নিজের ভেতর পুষে রাখা গেলেও, যুদ্ধদিনের স্মৃতি জোয়ারের মতো ঠিকই ভাসিয়ে নিয়ে যায় অতীতে- উজ্জ্বলের প্লাবন দিনে। অতীতের প্লাবনসম উজ্জ্বল দিনগুলো তো মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়গুলোই: কী এক অমোঘ টানে যুদ্ধে গিয়েছিল তাঁরা। কোথা থেকে এত সাহস এসে ভর করেছিল যে, সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে জীবনবাজি রেখেছিলেন যুদ্ধের ময়দানে? খাওয়া—দাওয়া, গোসলের ঠিক ছিল না। দিন—রাতের বিভেদ ছিল না। তবু সামনে এগোতে এক চুলও ডর আসেনি মনে। যেন এক অফুরন্ত শক্তির সন্ধান মিলেছিল মাতৃভূমির জরায়ু থেকে। সে শক্তিতে ভর করেই কত দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিতে পেরেছিল; পেরেছিল আহত হয়েও অভিযান থেকে সরে না যাওয়ার দূঢ়তা। তেমনি এক ঘটনা- মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ের। সেদিন গেরিলা হামলা করতে গিয়ে আহত হন তাদের কজন। পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি মুহূর্তে, বেঁচে যাওয়া পাক—সৈন্যদের পক্ষ থেকে অতর্কিত বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে তাঁরা নানান মাত্রায় আহত হন; আতিয়ার আহত হন একটু বেশি। বেঁচে থাকা এবং সংগ্রামের পরবতীর্ পদক্ষেপ হিসেবে- আহত অবস্থায় অনুমানের ভিত্তিতে কাঁদাভরা মাঠঘাঠ, জঙ্গলের পথ—প্রান্তর মাড়িয়ে পেরোতে হয়েছিল মাইলের পর মাইল। পথিমধ্যে আতিয়ার আরো কাবু হয়ে পড়ে। দলের অন্যরা কোনোভাবে এগোতে পারলেও আতিয়ার হাঁটার শক্তি ক্রমে হারিয়ে ফেলেন। একসময় অন্যদের কাঁধে ভর করেও আর হাঁটতে পারেন না। আবার, ওমন কাঁদাভরা মাঠঘাঠ আর জঙ্গলের পথ—প্রান্তরে চিকিৎসারও কোনো উপায় করা যাচ্ছিল না। সহযোদ্ধারা প্রাণপণ চাচ্ছিলেন- নিরাপদ দূরত্বে, নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে কিছু একটা ব্যবস্থা করার। কিন্তু তাঁদের পিলে চমকানো হোঁচট খাওয়ার অবস্থা হয় আতিয়ারের অসংলগ্ন কথাবার্তায়। সে বিড়বিড় করে আওরাতে থাকে, ‘আমি আর পারছি না, হয়তো আর পারবও না, আমাকে মাফ করে দিয়ো বন্ধুরা।’ তারপর সবাইকে একটু থামিয়ে, কোথা থেকে যেন শক্তি সঞ্চয় করে স্পষ্ট কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে নিয়ে তোমরা কষ্ট পেয়ো না, শোক করিয়ো না, আমার জন্য পিছনে ফিরে তাকিয়ো না। আমার অনুরোধ— আমাকে এখানেই কোথাও কবর দিয়ে, তোমরা তোমাদের যুদ্ধযাত্রায় এগিয়ে যেয়ো। তোমাদের দমলে হবে না, লক্ষ জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে।’
আতিয়ারের প্রথমের কথাগুলো নৈরাশ্যের মতো শোনালেও, শেষের দিকের কথাগুলো মন্ত্রের মতো উজ্জীবিত করে তোলে তাঁদের। আর এমন ঐশ্বর্যমণ্ডিত কথা বলতে বলতেই সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে সহযোদ্ধাদের কাঁধেই মারা যান আতিয়ার। হাত তখনো দুই বন্ধুর কাঁধে, কেবল মাথাটা ঝুলে যায় বুকের ওপর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শহীদ হন আতিয়ার। সবাই স্তব্ধ হয়ে যান, বুক ফাটা কান্না আসে, অথচ কান্না করার সুযোগ নেই, কেবল ম্যুরালের মতো ঠাঁয়—থমকে থাকেন কতক ক্ষণ। এর মধ্যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে। জোৎস্নাার আলোয় চারদিক ভেসে যেতে থাকে, সে জোৎস্না ে¯্রাতে ভেসে যায় তাঁদের শোকগাথাও। কারণ, শোকে ভেঙ্গে পড়ার উপায়ও ছিল না। তাঁরা জানতেন, তাঁদের নিজেদেরই নিজেদের সাহায্য করতে হবে; সামলে নিতে হবে। নিজেদের সামলে নিয়ে, আতিয়ারের দাফন সম্পন্ন করতে পাশের গ্রামের মানুষদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তাঁরা।
কোনো চেনা—পরিচয় নেই, জানাশোনা নেই, তবু গ্রামের সাধারণ জনগণ আপনজনের মতো ছুটে আসেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পেয়ে। যত্ন করে আতিয়ারকে রগোসল করান, কাফনের ব্যবস্থা করেন, তারপর এক ফাঁকা ভিটার কোণে জানাজা দিয়ে কবরস্থ করেন। আসলে সাধারণ মানুষেরা মুক্তিযুদ্ধে কম অবদান রাখেননি; তাঁদের সহযোগিতা না থাকলে আমরা—মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো কোনোভাবেই যুদ্ধে জয়ী হতে পারতাম নাÑ ভাবেন তোফাজ্জল হোসেন। যেন তিনি সাক্ষাৎ দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষেরা কীভাবে আশ্রয়—প্রশ্রয়—খাবার—খবর দিয়ে তাঁদেরকে আগলে রেখেছিলেন। কেবল অল্প কিছুসংখ্যক মানুষÑ রাজাকার, আল বদর, আল শামসÑ এরা পাকিস্তানি সৈন্যদের জুুগিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতর—বাহিরের খবর; বাঙালি কিশোরী—তরুণী—নারীদের তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি ডেরায়। এদের জন্যই মুক্তিযুদ্ধ প্রলম্বিত হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি আর রক্তক্ষরণ হয়েছে অধিক মাত্রায়। কতখানি জানোয়ার হলে জুলুম—অত্যাচারের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে, বরং অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে, দেশের মানুষ আর মা—বোনদের নিয়ে এমন ধর্মবিরোধী কাজ করতে পেরেছিল ধর্মেরই দোহাই দিয়ে… সেগুলো মনে পড়তেই তোফাজ্জল হোসেনের গা গুলিয়ে উঠে। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করেন তিনি, হয়তো ভোলারও।
আবছা—আবছা ঘুমিয়েও পড়েন গাড়ির সিটে গা এলিয়ে। খানিক বাদে ঘুম ভেঙ্গে গেলে, কেমন নিঘুর্ম নিঘুর্ম মনে হয়; ঠিক বন্ধু আতিয়ারকে কবর দেওয়ার পর পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে ঘুমহীন রাত কাটানোর পর যেমনটা হয়েছিল।
আজ তাই এ যাত্রায় গাড়িতে বসে ঝিমানির ঘোরে কান পাতেন সেদিনের যুদ্ধযাত্রায়Ñ রাত শেষে, খুব ভোরেই পা বাড়াতে হয়েছিল। পা কদমে কদমে আটকে যেতে থাকলেও; সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদেরই নিজেদের টেনে নিতে হয়েছিল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। অথচ, একবারের জন্যও মনে হয়নিÑ এই যে যুদ্ধ করছেন, প্রাণ দিচ্ছেনÑ এর প্রতিদান হিসেবে কী পাবেন তাঁরা। কেবলই ভেবেছেন, পাকিস্তানিদের শেষ কামড় পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে, আর স্বাধীনতা নিয়েই ঘরে ফিরতে হবে। সে স্বাধীনতা আরো কত দূরÑ তা ছিল এক অনিশ্চিত গন্তব্য আর তাঁরা ছিলেন সে অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রী। ওই সময়ে ট্রানজিস্টার ছিল তাঁদের দলের জন্য অন্যতম অনুপ্রেরণার জায়গা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর—গান আর বঙ্গবন্ধুর দীপ্ত আশার বাণী নতুন প্রাণসঞ্চার করে যাচ্ছিল। সে আশার প্রাণ—প্রাচুর্যের স্পর্শে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রের রণাঙ্গনে আবেগ—দুঃখ—কষ্টহীন পাথরের ভাস্কর্যের মতো দৃঢ় হয়ে থাকতেন মাঠঘাটে, পথে—প্রান্তরে, জঙ্গলে।
এমন নিদারুণ দিনের সমাপ্তির আভাস আসতে থাকে চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ের খবরে, বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে বিজয়ের সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে যেতে থাকে। সেটাই হবার কথা ছিল, কারণ দেশটা হয়ে পড়েছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের উন্মুক্ত উনুন, সে উনুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা পুড়বেÑ সেটাই ছিল বাস্তবতা। সে বাস্তবতার পিঠে চেপে আভাস ঠিক ঠিক সত্য হয়; আসে ১৬ ডিসেম্বর, প্রতীক্ষার বিজয়। তাঁরা একে—অপরকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠেন। যে কান্না আনন্দের, বিজয়ের, নতুন দেশ—নতুন সম্ভাবনা, অধরা সন্তান জন্মের…
গাড়ির গতি কমিয়ে এনে ড্রাইভার ডাকেÑ স্যার, একটু সিওর হবেন? তোফাজ্জল হোসেন চোখের ঝিমুনি ঝেড়ে রাস্তার আলোয় দৃষ্টি বোলানÑ বুঝতে পারেন বেশ সময় নিয়ে স্মৃতিমগ্নতায় ডুবে ছিলেন তিনি। বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের স্নিগ্ধ নরম আলোর চাদরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে চারদিক। তিনি গাড়ি থেকে নেমে চতুর্দিকে চোখ বোলান, বুঝতে পারেন, ৪০—৪৫ বছর আগের সেই অজঁ পাড়া—গ্রাম আর নেই। সরু কাঁচা সড়কগুলো পাকা এবং প্রশস্ত হয়েছে। সবুজের মাঝে অনেক দালান—কোঠা উঠেছে। তোফাজ্জল সাহেব জায়গাটির সন্ধান পেতে উপযুক্ত লোক খুঁজতে থাকেন পথচারীদের মধ্যে থেকে। দু—চারজন কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে ফের ব্যস্ত হয়ে উঠে নিজেদের পথ চলায়। তোফাজ্জল সাহেব ভিতরে ভিতরে চরম উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেই যুদ্ধজয়ের আনন্দ আর উত্তেজনা বোধ করতে থাকেন। এর মধ্যে এক পথচারীকে ডেকে জায়গাটির সন্ধান চান। পথচারীর কথাবার্তায় বোঝা যায়Ñ জায়গাটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে তাঁর গর্ব বোধ হয় বন্ধু আতিয়ারে জন্য। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে থাকেন ভিটেটির দিকে। পৌঁছে বুঝতে পারেন— নাহ, সেটি আজ কেবল ভিটে নয়, রীতিমতো প্রাচীরঘেরা মস্ত কবরস্থান। গেটে মস্ত বড় ফলক লাগানো, তাতে লেখা— ‘ফুলপুর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা গণকবর।’ তিনি গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকেন, অনেক কবর চোখে পড়ে, সব কবরই ইট—পাথরে গাঁথা ও টাইলস লাগানো এবং কবরের গায়ে নাম—ফলক বসানো। নাম—ফলক ধরে বন্ধু আতিয়ারের কবর খুঁজতে থাকেন তিনি, আতিয়ারের নামে কোনো কবর খুঁজে পাওয়া যায় না, তবু হন্য হয়ে খঁুজতে থাকেন। শীতের বিকেল, খুব দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসে। নিজের ভিতরে দারুণ অস্থিরতা তৈরি হয় তাঁর। অস্থির পায়ে আরো একবার কবরস্থানের এমাথা—ওমাথা ঘোরেন। সন্ধ্যা ক্রমেই ঘনিয়ে আসতে থাকলে নিরুপায় হয়ে ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে গেটের মুখে দাঁড়ান। হাতের ফুলের তোড়া গেটের সামনে রেখে রাস্তার দিকে পা বাড়ান।
কয়েক পা সামনে এগোতেই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে— বন্ধু, তুমিও অন্যদের মতো ভুল জায়গায় শ্রদ্ধা জানালে। তোফাজ্জল সাহেবের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যায়। আরে, এ তো বন্ধু আতিয়ারের কন্ঠ! পিছনে ফিরে তাকান। অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না, কিন্তু অন্ধকার ফুঁড়ে আবারো সেই কণ্ঠ বলে উঠে— ‘বন্ধু, আমাকে একটু এখান থেকে নিয়ে যাবে। আমি যে বড্ড মিথ্যার মধ্যে পড়ে আছি। খুব কষ্ট হয়। এই যে চারপাশে কবর দেখছো, চকচকে নাম—ফলকসহ, সব মিথ্যা। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখানে গজিয়ে উঠতে শুরু করে এরকম অনেক কবরের, যা আজ অবধি অব্যাহত। এই মিথ্যার ভিড়ে আমি কোণঠাসা এখানে। আমার বড্ড কষ্ট হয়— এমন মিথ্যার জন্য কি জীবনটা বিসর্জন দিয়েছিলাম? স্বার্থই কি মানুষ, মানবতা, দেশের থেকে বড় হয়ে উঠবে? এমনটার জন্যই কি এত আত্মত্যাগ করেছি আমরা?’
তোফাজ্জল হোসেন অন্ধকার নির্জন কবরস্থানে থ হয়ে যান। আতিয়ারের সাথে গলা মিলিয়ে চিৎকার করে তাঁরও বলতে ইচ্ছা করে— এমনটা হতে পারে না, হতে দেওয়া যায় না…! কিন্তু তিনি পারেন না, তাঁর কন্ঠের চিৎকার নিজের কান অবধি পৌঁছালেও, অন্যের কানে পৌঁছানোর মতো চিৎকার করার শক্তি কবে যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সেই মনঃপীড়া থেকে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেন। বলেন, ‘এ যে কী লজ্জার আমাদের মতো বীর, বীর জাতির?’
তিনি হাঁটতে থাকেন। বাস্তবতার হাওয়া—বাতাসের তর্জন—গর্জনে মনঃপীড়ার সবটাই ফুরিয়ে যেতে থাকে দ্রুত…
মনে মনে বলেন তোফাজ্জল হোসেন, ‘মৃত্যু ছাড়া মানুষ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না, তুমি মৃত— তাই পেরেছো বন্ধু, আমরা জীবিত বলে পারিনি।’